ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

শুভাঢ্যা খাল এখন যেন ‘প্লাস্টিকের ভাগাড়

 শুভাঢ্যা খাল এখন যেন ‘প্লাস্টিকের ভাগাড়

ময়লা–আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গেছে শুভাঢ্যা খাল। গতকাল দুপুরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর জোড়া ব্রিজ–সংলগ্ন এলাকায়
ময়লা–আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গেছে শুভাঢ্যা খাল। গতকাল দুপুরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর জোড়া ব্রিজ–সংলগ্ন এলাকায়ছবি: 

শুভাঢ্যা খাল এখন 'প্লাস্টিকের ভাগাড়': পরিবেশ বিপর্যয়ের অশনি সংকেত

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা: একসময়ের খরস্রোতা শুভাঢ্যা খাল এখন প্লাস্টিক ও আবর্জনার বিশাল স্তূপে পরিণত হয়েছে। কেরানীগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি একসময় স্থানীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার উৎস ছিল। নৌকা চলত, জেলেরা মাছ ধরত এবং কৃষিজমিতে সেচের পানি সরবরাহ করত। কিন্তু এখন এর বেশিরভাগ অংশই দখল, পলিথিন ও বারোয়ারি বর্জ্যে ভরে গেছে। এমন করুণ দশায় পরিবেশবিদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

খালের করুণ চিত্র

শুভাঢ্যা খালের চর কালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এটি এখন একটি বিশাল ময়লার ভাগাড়। শত শত শিল্পকারখানা, দোকানপাট ও বসতবাড়ির বর্জ্য প্রতিদিন এখানে ফেলা হচ্ছে। প্লাস্টিক, পলিথিন, ভাঙা ইট-সুরকি আর আবর্জনা জমে খালটি এমনভাবে ভরাট হয়ে গেছে যে, কিছু কিছু জায়গায় হেঁটে পার হওয়া যায়। পানির কোনো চিহ্নই নেই। দেখে মনে হয়, এটি যেন বর্জ্য ফেলার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও, উত্তর শুভাঢ্যা থেকে চিতাখোলা পর্যন্ত খালের আরেকটি অংশ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে এবং সেখানে ঘাস জন্মেছে। সম্প্রতি চিতাখোলা থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত খালটি খনন করা হলেও, খননকৃত মাটি পাড়ে স্তূপ করে রাখায় পানি প্রবাহের কোনো পথ তৈরি হয়নি। ফলে খালটি এখনও নিষ্কাশনের কাজ করতে পারছে না।

দখল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব

স্থানীয়দের অভিযোগ, দখল ও অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণেই খালের এই দশা হয়েছে। খালপাড়ের অনেক বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জানান, বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই অনেকে খালে ময়লা ফেলছেন। তবে এই মন্তব্য একদিকে যেমন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়, অন্যদিকে তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও তোলে: বর্জ্য ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ও সহজ বিকল্প কি আছে? স্থানীয় নেতারা অবৈধভাবে খালের দুই পাড় দখল করে দোকানপাট তৈরি করেছেন, আর সেসব দোকানের সব বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলা হচ্ছে।

সরকারি উদ্যোগ, তবুও নেই সুফল

খালটিকে বাঁচাতে অতীতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল খনন করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার দখল ও দূষণ শুরু হয়। ২০১২ সালে উপজেলা প্রশাসন ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে খাল পুনর্খননের কাজ শুরু করে। কিন্তু স্থানীয়দের মতে, এসব প্রকল্প ছিল লোক-দেখানো এবং এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তবে আশার কথা হলো, সম্প্রতি সরকার শুভাঢ্যা খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে ৩১৭ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে খালটি পুনঃখনন, পাড় বাঁধাই এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, শুধুমাত্র প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং জনগণের সচেতনতাও জরুরি।

ভবিষ্যৎ কী?

শুভাঢ্যা খালের এই পরিস্থিতি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে গেছে, যা ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে খালের অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যাবে। সরকারকে শুধু প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ না থেকে এর নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আপনার মতে, এই পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি জনসাধারণের কী ধরনের ভূমিকা পালন করা উচিত?

Post a Comment

0 Comments